বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি অঞ্চল ভোলাগঞ্জ। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভারতের মেঘালয়ের কোলে ভোলাগঞ্জে অবস্থিত সাদা পাথর মূলত ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদা পাথর হল ধলাই নদীর উৎসমুখের পাথর বেষ্টিত জায়গা। বাংলাদেশে প্রবেশের পর ধলাই নদী দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে মাঝে ভোলাগঞ্জকে ঘিরে পরে আবার মিলিত হয়েছে। তাই পুরো এলাকাটি অনেকটা ব-দ্বীপের মতো দেখতে। উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার স্রোত এখানে মিশেছে ধলাই নদীর সাথে। পাথরে গা এলিয়ে পানির স্রোতে ভেসে আপনি এখানে উপভোগ করতে পারবেন সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘের আনাগোনা। ধলাই নদীর স্রোতে ভেসে আসা পাথর উত্তোলনের কাজে মগ্ন স্থানীয়দের ব্যস্ততা দেখে কেটে যাবে অনেকটা সময়। ছোট নৌকায় করে পাথর সংগ্রহ করা এখানে বহু মানুষের জীবিকা। তাছাড়া ভোলাগঞ্জ সীমান্তের ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশে চুনাপাথর আমদানী করা হয়। এখানে শত শত ট্রাকে চুনাপাথরবাহী ট্রাক চোখে পড়বে। সাদাপাথরের কাছেই রয়েছে উৎমাছড়া, তুরুংছড়া নামের চমৎকার দুটি জায়গা। কিন্তু বর্ষাকাল ছাড়া এখানে তেমন পানি থাকেনা।  

 

 

সাদাপাথর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় 

সাদাপাথর ঘোরার সবচেয়ে ভালো সময় হল বর্ষাকাল। তবে স্রোত অনেক থাকে, তাই সাবধানে পানিতে নামবেন। জুন থেকে ডিসেম্বর মাস ভোলাগঞ্জ আসার জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক আবহাওয়া থাকে। অন্য সময় আসলে এখানের নান্দনিক পাথুরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, তবে পানির স্রোত তুলনামূলক কম পাবেন।  

কোথায় খাবেন? 

ভোলাগঞ্জে ভালো কোনো খাবার জায়গা নেই। কিছু সাধারণ হোটেলে ভাত-মাছ আর দেশীয় খাবার পাবেন। ভোলাগঞ্জ যাবার পথে আলম হোটেল ও দেশবন্ধু সহ কিছু হোটেল রয়েছে। তাছাড়া টুকের বাজারেও এমন খাবার কিছু দোকান আছে। ভালোমানের খাবারের জন্য সিলেটে সকাল আর রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন পানশী বা পাঁচ ভাই-তে।  

ভোলাগঞ্জে থাকার জায়গা 

ভোলাগঞ্জে থাকার তেমন ভাল হোটেল নেই। থাকার জন্য সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট চলে আসতে পারেন। এখানে লালবাজার আর দরগা রোডে কম দামে ভালো মানের হোটেল পাবেন। তারপরেও যদি একান্তই থাকার দরকার হয় তাহলে ভোলাগঞ্জ থেকে কোম্পানিগঞ্জে চলে আসুন। এখানেও কিছু ভাল আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন থাকার জন্য।  

ভোলাগঞ্জ একটি সীমান্তবর্তী এলাকাসাবধানে ঘুরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার আগেই সিলেট ফিরে আসুন। 

কিভাবে যাবেন? 

ভোলাগঞ্জ যেতে হলে আপনাকে সিলেট আসতে হবে। ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিলেটের বাস বা ট্রেনে করে সিলেট চলে আসতে পারেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন সময় সিলেটের বাসের টিকেট কিনে নিতে পারবেন ঘরে বসেই।   

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সিলেট থেকে বাস, অটো, লেগুনা বা গাড়িতে করে চলে যেতে পারেন ভোলাগঞ্জ। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লোকাল এবং বিআরটিসি বাসে করে সিলেটের আম্বড়খানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে পারবেন। প্রতি ১৫-২০ মিনিট পরপরই বাস পাবেন এখানে। মাত্র ৭০টাকা দিয়ে ১ঘন্টা ৩০ মিনিটে আম্বরখানা- সাদাপাথর চলে যেতে পারবেন সহজেই। অটো বা সিএনজি  আসা-যাওয়া রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১২০০-১৩০০টাকা। তাছাড়া লোকাল সিএনজি-তে জনপ্রতি ১৩০-১৫০ টাকা করে যেতে পারবেন। যাতায়ত খরচ কমাতে চাইলে ৫ জন বা ১০ জনের গ্রুপে ভ্রমণ করা সুবিধা।  

উৎমাছড়া ও তুরংছড়া   

সাদা পাথর দেখে আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চমৎকার দুইটি জায়গা উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। সেজন্য আপনাকে আগে আসতে হবে দয়ারবাজার। সেখান থেকে জনপ্রতি ৩০-৫০টাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসুন চরার বাজার। কাউকে জিজ্ঞেস করে পথ পেয়ে যাবেন, মাত্র ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া। তুরংছড়া হেঁটে যেতে পারবেন চরার বাজার থেকে। সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। তাছাড়া চরার বাজার থেকে বাইকেও তুরংছড়া যেতে পারবেন কম সময়ে। সকাল সকাল রওয়ানা করলে খুব সহজে সাদাপাথর, উৎমাছড়া ও তুরংছড়া – তিনটি জায়গাই ঘুরে আসতে পারবেন।