সমুদ্রকন্য কুয়াকাটা বেড়াতে যাবেন ভাবছেন? শীতকালে কুয়াকাটার আলাদা রূপ থাকলেও এক এক ঋতুতে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত এই সমুদ্রসৈকতের আছে নিজস্ব সৌন্দর্য।   

কুয়াকাটা মেইন বিচ ছাড়াও এখানে দেখার আছে আরও কিছু। এরকম ৩টি পর্যটন স্থান সম্পর্কে ধারণা পাবেন এখানে।  

  • ফাতরার বন 

‘দ্বিতীয় সুন্দরবন’ হিসেবে পরিচিত ফাতরার বন সুন্দরবনেরই অংশ। লবনাক্ত পানিতে জন্মানো গোলাপাতা, কেওড়া, গেওয়া আর গরানসহ অনেক বিচিত্র উদ্ভিদ নিয়ে গড়ে উঠেছে সুবিস্তৃত এই বন। কুয়াকাটা বিচের পশ্চিমদিকে গেলেই চোখে পড়ে ঘোলাটে নদী আর সমুদ্রের মোহনায় জেগে উঠা ফাতরার চর। নৌকায় চড়ে এই বনে ঘুরতে গেলে আপনার চোখে পড়বে বানর, শুকরসহ অসংখ্য পশুপাখির মুক্ত বিচরণ। ট্রলার বা নৌকায় চড়ে দুই পাশের সারি সারি সবুজ গাছগাছালি দেখতে দেখতে ফাতরার চরে পৌঁছে যাবেন। জেটি পেরিয়ে চরে ঢুকলেই পাবেন বন বিভাগ নির্মিত রেস্ট হাউজ আর বিশাল পুকুর। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে এই রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন, তবে এখানে বন বিভাগের কয়েকজন বনরক্ষী ছাড়া কেউ স্থায়ীভাবে থাকে না। চরের পূর্বে রয়েছে চমৎকার সৈকত। এখানে চাইলে আপনি নামতে পারবেন। দিনে দুইবার জোয়ার-ভাটা আসে ফাতরার চরে। পুকুর ধরে সামনে গেলেই ঢুকে যাবেন ফাতরার বনে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসেই কেবল আপনি এই বনে আসতে পারবেন।  

কিভাবে যাবেন? 

কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিনই ট্রলার আসে ফাতরার বনে। চাইলে রিজার্ভ ট্রলারে ২ ঘন্টার জন্য ঘুরে দেখে নিতে পারেন ফাতরার বন।   

  • গঙ্গামতি  চর 

যদি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত একই জায়গা থেকে দেখতে চান, তাহলে আপনার জন্য সেরা জায়গা হল গঙ্গামতির চর। কুয়াকাটার পূর্বে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়েছে এই চরে। সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি আর অজানা পাখিদের কলকাকলিতে মুখর এক অসাধারণ সূর্যোদয় উপভোগ করতে পারেন এখানে। সকালে আসলে সাথে খাবারদাবার আর পানি নিয়ে আসতে ভুলবেন না। কারণ এখানে এসে সহজে চলে যেতে ইচ্ছা করে না কারও। জেলেদের মাছ ধরা আর ছই দেওয়া নৌকার চলাচল আপনাকে স্মৃতিক্তর করে তুলতে যথেষ্ট। সারাদিন সময় কাটিয়ে সূর্যাস্তে দেখবেন লাল সূর্যের টুক করে সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার অসাধারণ দৃশ্য। কুয়াকাটা এসে গঙ্গামতি চর না দেখলে অপূর্ণ থেকে যাবে কুয়াকাটা ভ্রমণ। 

কিভাবে যাবেন? 

কুয়াকাটা থেকে বাইক, মাইক্রো বা অটোতে করে চলে আসতে পারেন গঙ্গামতি চরে।   

  • মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ মন্দির 

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের ৩৬ ফুট উচ্চতার অষ্টধাতুর এই মূর্তি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি হিসেবে বলা হয়। রাখাইন্ আদিবাসীদের জন্য এই মন্দির কেবল উপাসনালয় নয়, তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীকও। মন্দিরের পাশে দেখতে পাবেন ২০০ বছরের পুরানো কূপ। সুন্দর বাগান আর ছোট ছোট কিছু মূর্তিও দেখতে পাবেন সিমা বৌদ্ধ মন্দিরে।  

বিহারের দায়িত্বরতরা বিনামূল্যে শিশু শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। বিহারেই ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে। এখানে রাখাইনদের আবাস্থল রয়েছে। পাশেই সারি সারি দোকানে পাবেন রাখাইনদের হাতে তৈরি বিখ্যাত চাদর, শাল পাবেন।   

কিভাবে যাবেন? 

কুয়াকাটা থেকে অটোতে বা রিজার্ভ গাড়িতে করে চলে আসুন মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দির।  

কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। আগে ফেরি পারাপারের ঝামেলা থাকলেও, পদ্মা সেতু হওয়ার পর অনেক বাস অল্প সময়ে যাতায়ত করে কুয়াকাটায়। সেরা সেবার ভালো বাসের টিকেট এখন অনলাইনে পাবেন সহজ-এ। তাই যদি ঘুরে আসতে চান কুয়াকাটা, এখনই সময়।